১৯৩৯ সালের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্তাবলি উল্লেখ কর।

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পরস্পরবিরোধী দুইটি দেশের মধ্যে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া। দুইটি অংশ ছিল ১৯৩৯ সালে ঘটে যাওয়া এই চুক্তিতে। একটি ছিল প্রকাশিত অপরটি দুই রাষ্ট্রের মধ্যে গোপন ছিল। এর তাৎপর্য বুঝা যাবে এই চুক্তির দুইটি অংশকে বিশ্লেষণ করলে। একই সাথে আলোচিত ও সমালোচিত এই চুক্তি।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির ধারাসমূহ/শর্তসমূহ : রুশ- জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি অন্যতম ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির মধ্যে। এই চুক্তিটি অপ্রত্যাশিত ছিল বলে এই চুক্তি ঘটনার মোর ঘুরিয়ে দেয়। একটি অস্থায়ী বা নির্দিষ্ট মেয়াদি চুক্তি ছিল এটি। এই চুক্তি দুই দেশ তার স্বার্থ রক্ষার খাতিরে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি স্বাক্ষরকারী পরস্পর আদর্শ বিরোধী ছিল । হিটলার তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর বাধা কাটানোর জন্য এই চুক্তিটি ২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে সম্পাদিত করে। ২টি অংশ রয়েছে আলোচিত এই চুক্তির। একটি হলো সবার কাছে উন্মুক্ত বা প্রকাশিত। আর অপরটি দুই দেশের মধ্যে গোপন রাখা হয়। চুক্তির ২টি অংশের শর্ত বা ধারাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

প্রকাশ্য অংশ : মূলত ৪টি ধারা বা শর্ত রয়েছে প্রকাশিত অংশের এবং এটি দুই দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত।
প্রথম শর্ত, চুক্তিবদ্ধ দুই দেশ পরস্পরের উপর কোন অনাক্রমণাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না।
দ্বিতীয় শর্ত, চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের মধ্যে কোন দেশ যদি তৃতীয় কোনো দেশ বা পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হয়। তবে চুক্তিবদ্ধ অপর দেশ সেই তৃতীয় পক্ষ দেশকে সমর্থন দিবে না ।
তৃতীয় শর্ত, চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের মধ্যে স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে বিবাদ দেখা দিলে তা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান করা হবে ।
চতুর্থ শর্ত, এই চুক্তির শর্তাবলি বা এই চুক্তিটি ১০ বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে বা বলবৎ থাকবে।
অপ্রকাশিত/গোপন অংশ : দুই দেশের মধ্যে গোপন কিছু শর্ত বা ধারা ছিল এই চুক্তিতে। যা পূর্ব ইউরোপের বিস্তীর্ণ ভূমিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জার্মানির প্রভাব বা ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ছিল। মূলত দুইটি গোপন শর্তাবলি বা ধারা ছিল এই চুক্তির । যেমন-
প্রথম শর্ত, বাল্টিক অঞ্চলের প্রাধান্য দিয়ে চুক্তিবদ্ধ দুই দেশের কোনো সমস্যা হয় তবে লিথুনিয়ার উত্তর সীমান্ত হবে রাশিয়া ও জার্মানির প্রভাব বলয়ের সীমারেখা। অর্থাৎ বাল্টিক অঞ্চলের ফিনল্যান্ড, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, বাইলো রাশিয়া এই দেশগুলো রাশিয়ার অধীনে থাকবে আর জার্মানির কাছে লিথুনিয়া দেখা হবে।
দ্বিতীয় শর্ত, পোল্যান্ড দখলের পর তাকে নিয়ে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তাই পোল্যান্ডের উপর জার্মানি ও রাশিয়ার প্রভাব বলয় নির্ধারিত হয় নাবিউ, ভিসটুলা ও সান নদীর তীর বরাবর । সুতরাং এর মাধ্যমে জার্মানির কাছে পশ্চিম পোল্যান্ড ও বেসারাবিয়া থাকবে এবং পূর্ব পোল্যান্ড সোভিয়েত ইউনিয়ন এর দখলে থাকবে।

দুই পরস্পরবিরোধী আদর্শের দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে যা এই চুক্তির প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত ধারা বিশ্লেষণ করলে জানা যায়। কিন্তু রাশিয়াকে সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় রেখে নিজের স্বার্থ উদ্ধার এবং পরবর্তীতে আকস্মিকভাবে রাশিয়াকে আক্রমণ করার জন্য হিটলার এই চুক্তি করে। অপরদিকে, আপাতত যুদ্ধকে বিলম্বিত করা এবং এই সময়ের মধ্যে সোভিয়েত রাশিয়াকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার জন্য রাশিয়াও এই চুক্তি করেছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির দুইটি অংশের ধারা বা শর্তগুলো অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ছিল রাশিয়া যুদ্ধ থেকে বিরত হয়ে যায় প্রকাশ্য অংশের ধারার মাধ্যমে এবং জার্মানি গোপন অংশে রাশিয়াকে তার হৃত অঞ্চল ফিরিয়ে দেয় এর মূল্যস্বরূপ এবং রাশিয়ার কর্তৃত্ব স্বীকার করে নেয় পূর্ব পোল্যান্ডে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram