― Advertisement ―

spot_img

বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) পরীক্ষা-২০১৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ইতিহাস বিভাগ) বিষয় কোড : 241503 বিষয় : বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) ক-বিভাগ (ক) ক্ষুদিরাম কে ছিলেন? উত্তর : ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সর্বকনিষ্ট এক বিপ্লবী ছিলেন। (খ) কখন...
Homeবাংলার ইতিহাস১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।

১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের কারণ ও ফলাফল আলোচনা কর ।

অথবা, ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের উপর একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা কর


উত্তর :ভূমিকা : ১৯৪২ সালের শেষদিকে দেশে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এই সংকট মোকাবিলা করার মতো জনসমর্থন ফজলুল হক মন্ত্রিসভার ছিল না। এজন্য ১৯৪৩ সালের ২৮ মার্চ ফজলুল হক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তার পদত্যাগের পর ১৯৪৩ সালের ২৪ এপ্রিল খাজা নাজিম উদ্দিন মন্ত্রিসভা গঠন করেন। তার মন্ত্রিসভা গঠনের অল্পদিনের মধ্যে ১৯৪৩ সালে বাংলায় মহাদুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩৩ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের জন্য ভারত সরকার হক মন্ত্রিসভা ও মুসলিম লীগ সকলেই কমবেশি দায়ী ছিল।

→ ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের কারণ : নিম্নে ১৯৪৩ সালের মহাদুর্ভিক্ষের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো-

১. রাজনৈতিক দলসূহের অবহেলা : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের প্রধান কারণ ছিল রাজনৈতিক দলসমূহের অবহেলা। ফজলুল হকের সময় দেশে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দেয়। যার কারণে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এরপর খাজা নামিজউদ্দিনের মন্ত্রিসভা গঠনের অল্পদিনের মধ্যে ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ দুর্ভিক্ষে ৩৩ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। তৎকালীন বাংলা সরকার কর্তৃক উডহেড কমিশন যে রিপোর্ট পেশ করে তাতে বলা হয় দুর্ভিক্ষের জন্য ভারত সরকার হক মন্ত্রিসভা ও মুসলিম লীগ আংশিকভাবে দায়ী ছিল ।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা ও এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল। এ সময় জাপানিদের ভারত আক্রমণের সম্ভাবনা ছিল। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশের যানবাহন নষ্ট করে দেয় এবং খাদ্য শস্য ক্রয় করে গুদামজাত করে ও সৈন্যদের প্রয়োজনে বাহিরে পাঠিয়ে দেয়।

৩. জাপান কর্তৃক ব্রহ্মদেশ দখল : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো জাপান কর্তৃক ব্রহ্মদেশ বা বার্মা দখল। জাপানিরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে হঠাৎ ব্রহ্মদেশ দখল করেন। জাপানি সেনাবাহিনীর হাতে বার্মার পতন হলে  সেখানে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ব্রহ্মদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বহু উদ্বাস্তু আসার ফলে পরিস্থিতির আর ও অবনতি ঘটে। যার ফলে দুর্ভিক্ষ আর প্রকট আকার ধারণ করে।

৪. খাদ্য গুদামজাত করার প্রবণতা : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের একটি অন্যতম কারণ হলো সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্য গুদামজাত। এই খাদ্য গুদামজাত করার ফলে খাদ্য ঘাটতি চরম আকার ধারণ করে। এছাড়া কিছু অসৎ ও অর্থলোভী ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় খাদ্য গুদামজাত করে । যার ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটে।

৫. কডনিং প্রথা : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় বাংলায় কর্ডনিং প্রথা প্রচলিত ছিল। এ ব্যবস্থার ফলে সব জায়গায় যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে খাদ্য শস্য অবাধ চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধার সৃষ্টি হয়। পাঞ্জাব সরকার বাংলায় এই দুর্ভিক্ষের সময় গম ও আটা পাঠাতে রাজি থাকলেও কড়িনিং প্রথার কারণে পাঠাতে ব্যর্থ হয়।

৬. সরকারি অব্যবস্থাপনা : সরকারি অব্যবস্থাপনা ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ। তৎকালীন সরকার এ দুর্ভিক্ষের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছিলেন। এছাড়া সরকারের আমলা ও কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব ও কর্তব্য যথেষ্ট দায়িত্বহীন ও উদাসীন ছিলেন। ব্রিটিশ সরকার এই দুর্ভিক্ষে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি

৭. কৃষির উৎপাদন কমে যাওয়া : ১৯৩৮ সাল থেকে বাংলায় কৃষির উৎপাদন কমতে থাকে যা ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের জন্য অনেকটা দায়ী। কৃষির উৎপাদন কর্ম হওয়ার কারণে সরকার ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়।

৮. খাদ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতা : খাজা নাজিমউদ্দিনের মন্ত্রিসভায় সোহরাওয়ার্দী খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি এ দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য তেমন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি বাংলার অন্যান্য প্রদেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী আনতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ।

৯. বিদেশি সাহায্যে গ্রহণ অনীহা : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের আরেকটি অন্যতম কারণ হলো বিদেশি সাহায্যে গ্রহণে অনীহা। এই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সহায়তার হাত বাড়াতে চেয়েছিল কিন্তু চার্চিলের মন্ত্রিসভা তা মেনে নেয়নি। এমনকি এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজের জাহাজে খাদ্য পাঠাতে চেয়েছে । ব্রিটিশ শাসক তাও গ্রহণ করেননি। ১০. অনাবৃষ্টি : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের জন্য অনাবৃষ্টি ও দায়ী ছিল। কারণ এই সময় অনাবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ গঠনে ব্যাপক কমে যায়। যার ফলে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

দেয়া → ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ফলাফল : নিম্নে ১৯৪৩ সালের আনু দুর্ভিক্ষের ফলাফল আলোচনা করা হলো-

১. অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের দুর্ভিে ফলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার চরম অবনতি হয়েছিল। ৩৮ আংি লক্ষ মানুষ অনেক কষ্টে জীবনধারণ করতে থাকে। এছাড়া প্রায় সেখা সাড়ে তিন লাখ পরিবার চরম দারিদ্র সীমার নিচে পড়ে। তারা নিজের যাবতীয় সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

২. রোগব্যাধি : যেকোনো দুর্ভিক্ষের ফলে রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাবে এটা দুর্ভি একটি সাধারণ ঘটনা ঠিক তেমনি ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ক্ষেত্রেও একই । এই দুর্ভিক্ষের ফলে মানুষের মধ্যে রোগব্যাধি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এসব রোগের মধ্যে কলেরা, ডাইরিয়া, বসন্ত ও ম্যালেরিয়া অন্যতম ।

৩. দেশান্তর : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ফলে অনেক মানুষ বাংলা থেকে অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়। ভারতের কলকাতায় বেশি সংখ্যাক মানুষ দেশান্তরিত হয়েছিল।

৪. খাদ্য ঘাটতি : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ফলে ব্যাপক সা খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। অনেকে আবার খাদ্য মজুত করার ফলে সাধারণ মানুষ না খেয়েই মৃত্যুবরণ করেছে।

৫. দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ফলে দ্রব্যমূল্য বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষের পক্ষে যেকোনো দ্রব্য ক্রয় করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এছাড়া অনেক সময় কোনো জিনিস পাওয়া গেলেও অধিক দামের কারণে মানুষ ক্রয় কর পারেনা।

৬. মৃত্যুহার : ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে ৩৫ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ কে করে। এ মৃত্যুর হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ছিল ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের লক্ষ জন্য কোনো রাজনৈতিক দল এককভাবে দায়ী ছিল না। মুসলিম  সরকারের দায়িত্বহীনতা, সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত খাদ্য মজুত, যার মুনাফা ভোগীদের দৌরত্ম্য ও সরকারের অব্যবস্থাপনা এই দুর্ভিক্ষের সুনি অন্যতম কারণ ছিল। সোহরাওয়ার্দীর খাদ্যশস্য সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থার ফলে বহু লোক অনশন ক্লিস্ট লোক মৃত্যুর কবল থেকে রক্ষা মুসি পায় । ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সূদুরপ্রসারী ।