― Advertisement ―

spot_img

বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) পরীক্ষা-২০১৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ইতিহাস বিভাগ) বিষয় কোড : 241503 বিষয় : বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) ক-বিভাগ (ক) ক্ষুদিরাম কে ছিলেন? উত্তর : ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সর্বকনিষ্ট এক বিপ্লবী ছিলেন। (খ) কখন...
Homeবাংলার ইতিহাস১৯৪০-৪৭ সময়কালে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক আলোচনা কর।

১৯৪০-৪৭ সময়কালে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, ১৯৪০-৪৭ সময়কালে বাংলায় হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক পর্যালোচনা কর ।


ভূমিকা : হিন্দু ও মুসলিম বাংলার অন্যতম দুটি সম্প্রদায়। বাংলায় এই দুটি জাতিগোষ্ঠী ছাড়াও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোক বসবাস করতো। কিন্তু সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে এই দুই জাতি গোষ্ঠীর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা বিভিন্ন সময় সুখ দুঃখে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তারপর ও বাংলার হিন্দু মুসলমানদের এক গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল ।

→ ১৯৪০-৪৭ সময়কালে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক : নিম্নে ১৯৪০- ৪৭ সময়কালে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক আলোচনা করা হলো-

১. বঙ্গভঙ্গের প্রভাব : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর থেকে হিন্দু মুসলিম সম্পর্কের ফাটল ধরে। বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলমানরা অনেক খুশি হয়েছিল। অন্যদিকে হিন্দুরা বঙ্গভঙ্গের ব্যাপক বিরোধিতা করে তা রদ করার দাবি তুলে। ইতোপূর্বে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল না। ব্রিটিশরা এই বিভাজনের বীজ রোপন করেছিল । যার ফলে তখন থেকেই হিন্দু মুসলিম এই দুই জাতির চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরম্ভ হয়

২. এ. কে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা : এ. কে ফজলুল দুইবার বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি এই দুইবার মন্ত্রিসভা গঠন করে বেশকিছু সংস্কার সাধন করেন। একে ফজলুল হক কৃষকদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়া তিনি মুসলমান শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এগুলোর ফলে হিন্দুদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় ।

৩. লাহোর প্রস্তাব : ভারতের জাতীয় কংগ্রেস হিন্দুরা ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য মুসলমানরা ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ গঠন করেন। মুসলিম ও কংগ্রেস ভারতের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল । এই দুটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই হিন্দু মুসলমান দুটি আলাদা জাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়। যার কারণে একে ফজলুল হক ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটি ছিল মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের একটি প্রস্তাব। লাহোর প্রস্তাবের ফলে হিন্দুদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল ।

৪. আগস্ট প্রস্তাব : ভারতের রাজনৈতিক অস্তিরতা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল ঠিক তখনই ব্রিটিশ সরকার আগস্ট প্রস্তাব পেশ করেন। এই আগস্ট প্রস্তাবকে মুসলমানরা স্বাগত জানিয়েছিল। অপরদিকে হিন্দুরা আগস্ট প্রস্তাবের চরম বিরোধিতা করে। এর ফলে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় ।

৫. ক্রিপস মিশন : ১৯৪২ সালের ক্রিপস মিশন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৪২ সালে ক্রিপস হোমা করে। এই ক্রিপস মিশনে ব্রিটেনের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছিল। যার ফলে এই মিশনকে হিন্দু মুসলিম

উভয়ই পরিত্যাগ করেছিল।

৬. ভারত ছাড় আন্দোলন : ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে ভারতবাসীর মধ্যে প্রবল হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। এজন্য ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধী ভারত ছাড় আন্দোলনের ডাক দেন।  আন্দোলন শুরু করা হয়েছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে। ভারত ছাড় আন্দোলনের হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন।

৭. মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা : ব্রিটিশদের শাসনের প্রতি জনগণ যখন চরম অতিষ্ট ঠিক এ সময় মুসলমানরা নিজেদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। এর ফলে হিন্দু মুসলমানাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

৮. ১৯৪৬ সালের নির্বাচন : ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে মুসলিম জয় লাভ করে ব্যাপক সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেন। এই নির্বাচনে জয়লাভ করার ফলে মুসলিম নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় বেশ তৎপর ছিলেন। সেজন্য হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয় ।

৯. কলকাতায় হত্যাকাণ্ড : বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম কলকাতা থেকে বোম্বাই আসেন। এরপর তাঁরা সেখানে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন। সোহরাওয়ার্দী প্রতিবাদ সভার মুসলিম লীগের প্রত্যক্ষ সংগ্রামে গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। যার ফলে কলকাতায় এক রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা আরম্ভ হয়। এই দাঙ্গার ফলে হিন্দু মুসলিমদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

১০. ভারত বিভক্তি : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বিন্দু ও মুসলমানদের দাবির মুখে ভারত বিভক্তি করেন। ব্রিটিশরা ভারত বিভক্তি করলে ও এর অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি ছিল। সেজন্য মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস এর বিরোধীতা করে। যদিও শেষ পর্যন্ত তারা ভারত বিভক্তি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪০-৪৭ সাল পর্যন্ত হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক বিরাজ করছিল। এই সম্পর্ক তাদেরকে দিনদিন ধ্বংসের দিকে ধাপিত করেছিল। যার ফলে, হিন্দু মুসলমান উভয়ই জাতি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার শক্তি সাহস হারিয়ে ফেলেছিল। ঠিক এই মহূর্তে ভারত বিভাগ ছিল ভারতবাসীর জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এর মাধ্যমে প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসনের পতন ঘটে।