― Advertisement ―

spot_img

বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) পরীক্ষা-২০১৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ইতিহাস বিভাগ) বিষয় কোড : 241503 বিষয় : বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) ক-বিভাগ (ক) ক্ষুদিরাম কে ছিলেন? উত্তর : ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সর্বকনিষ্ট এক বিপ্লবী ছিলেন। (খ) কখন...
Homeবাংলার ইতিহাস১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।

১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা কর ।

অথবা, বেঙ্গল প্যাক্টের (১৯২৩) পটভূমি ও গুরুত্ব আলোচনা কর।


উত্তর : ভূমিকা : রাজনৈতিক সংকট নিরসনে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে তাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, আর এটাই বা এই চুক্তিই ইতিহাসে বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি নামে পরিচিত। এটা মূলত ১৯২০ সালে অসহযোগ- খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হলে নতুনভাবে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। আর এ সমস্যা সমাধানের জন্যই মূলত নামে পরিচিত একটা রাজনৈতিক চুক্তি করা হয় আর এটাই বেঙ্গল প্যাক্ট চুক্তি

→ বেঙ্গল প্যাক্ট : ঔপনিবেশিক শাসনের প্রভাবে ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন বেঙ্গল প্যাক্ট তাদের জন্য আশার আলো বয়ে আনে যার নেতৃত্ব দেন চিত্তরঞ্জন দাস। তিনি মুসলমানদের সহযোগিতা লাভের আশায় মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন। তিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে সমঝোতার মনোভাব নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চিত্তরঞ্জন দাসের লক্ষ্য ছিল পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে হিন্দুদের সমকক্ষ করা। আর এ কারণেই তিনি সমঝোতায় আসেন এবং একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত করেন। যা ১৯২৩ সালে স্বাক্ষরিত এ রাজনৈতিক চুক্তিই ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্ট নামে অভিহিত হয়।

→ ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্টের পটভূমি : ব্রিটিশ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসমূহের মধ্যে ১৯২০-২১ সালের মহাত্মা গান্ধী এর নেতৃত্বে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সর্বপ্রথম সমর্থন লাভে সক্ষম হয় এবং ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রের শক্তি ও প্রশাসনিক যোগ্যতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু কতিপয় উগ্রপন্থী ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চৌরিচিরিয়াতে পুলিশ ফাঁড়ি জ্বালিয়ে দিলে ২২ জন পুলিশ মারা যায়। ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী প্রতিবছর অন্তর নির্বাচনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ১৯২১ সালের পর ১৯২৩ সালে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, চিত্তরঞ্জন দাসের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠিক হয়. কংগ্রেসীরা নির্বাচন আমলাগুলো দখল করে সরকারী নীতির বিরোধিতা করবে। ১৯২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচনে চিত্তরঞ্জন দাস ও সুভাস চন্দ্র বসু সভাপতি ও কর্মসচিব নির্বাচিত হন। স্বরাজ পার্টির পক্ষে সমর্থন গোছাতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর চিত্তরঞ্জন দাস তার মুসলিম সহযোগী বাংলার মৌলভী আব্দুল করিম, মাওলানা আকরাম খা, মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী এবং মৌলভী মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি চুক্তি সম্পাদন করেন যা ঐতিহাসিক বেঙ্গল প্যাক্টর নামে পরিচিত

 বেঙ্গল প্যাক্টের গুরুত্ব : ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট ছিল ভারতবর্ষে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব প্রতিষ্ঠার দলিল। এ চুক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি সদাচারণ ন্যায্য অধিকার এবং ধর্মীয় মনোভাবের প্রতি শ্রদ্ধা র জানানো হয়। আর এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের বৈষম্যের রেখা মুছে যায় হিন্দু মুসলিমদের মধ্যে থেকে। চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে বেঙ্গল প্যাক্ট স্বাক্ষরিত হওয়ায় স্বরাজ দলের নেতৃত্বে বাংলার জন্য বহু প্রস্তাব পাস এ. অনেক প্রস্তাব বাতিল করা হয়। স্বরাজ দল বাংলার নির্বাচনে ৮৫টি আসনের মধ্যে ৪৭টি আসন লাভ করে। কলকাতা কর্পোরেশনে স্বরাজ দল তিন চতুর্থাংশ আসন দখল করার মাধ্যমে সি.আর. দাস মেয়র এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বেঙ্গল প্যাক্টের মূল লক্ষ্যই ছিল রাজনৈতিক অবসান ঘটানো এবং হিন্দু ও চা মুসলমানদের মধ্যে থেকে থেকে সাম্প্রদায়িকতা দূর করে  অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি তৈরি করা। চিত্তরঞ্জন দাস এর  নিরলস প্রচেষ্টায় যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তার ফলে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে সম্প্রীতি গড়ে উঠে এবং রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ তৈরি হয় এবং এর মধ্যে সকল নতুন আশার আলো তৈরি হয় ।