১৮৫৭ সালের পর ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারতে প্রশাসনিক পুনর্গঠন আলোচনা কর।

Reading Time: 1 minute

অথবা, ১৮৫৭ সালের পর ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারতে প্রশাসনিক পুনর্গঠন বর্ণনা কর।

ভূমিকা : ১৮৫৭ সাল ভারতবর্ষের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এসময় ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা আরম্ভ হয়েছিল । এ মহাবিদ্রোহের জন্য ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন কারণে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দায়ী করেন। এ কারণে ব্রিটিশ সরকার চেয়েছিল যে ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান হওয়া উচিত। এজন্য ব্রিটি সরকার ১৮৫৮ সালে ভারত স্বাধীনতা আইন পাশ করে ভারতের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। এরপর ভারতের প্রশাসনিক পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন ।

→ ১৮৫৭ সালের পর ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারতের প্রশাসনিক পুনর্গঠন : নিম্নে ১৮৫৭ সালের পর ব্রিটিশ রাজের অধীন ভারতের প্রশাসনিক পুনর্গঠন বর্ণনা করা হলো :

১. শাসন ক্ষমতায় রানির হস্তগত : ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানি একটি ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ভারতের শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন। মহারানি ভিক্টোরিয়াপর পক্ষে ভারতের শাসন পরিচালনা করার জন্য তার মন্ত্রিসভার কোনো এক সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তিনি রানির পক্ষ থেকে ভারতের শাসনভার পরিচালনা করতো।

২. কোম্পানির দায়িত্ব অবসান : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে। পূর্বে কোম্পানি ও ব্রিটিশ সরকার যৌথভাবে শাসন পরিচালনা করতো। এখন থেকে শুধু ব্রিটিশ সরকার ভারতের শাসন পরিচালনা করবে এবং কোম্পানিকে ভারতীয় শাসনের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়। যার ফলে ভারতের সমগ্র শাসনভার ব্রিটিশ সরকারের হাতে চলে যায়।

৩. ভারত সচিব পদ সৃষ্টি : ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার নির্দেশে ভারত সচিব পদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। ভারত সচিবপদ সৃষ্টির প্রধান কারণ হলো তিনি ভারত শাসনের দায়িত্ব পালন করবেন। ভারত সচিব একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ ছিল। ভারত সচিবকে সাহায্যে করার জন্য ১৫ জন সদস্য ছিল। তারা সবাই ভারত সচিবকে শাসন পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতেন।

৪. গভর্নর জেনারেলের দায়িত্ব : মহারানি ভারতের শাসনতন্ত্র পুনর্গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। আর এ পুনর্গঠন করতে গেলে কর্মচারী নিয়োগ একান্ত প্রয়োজন। এজন্য তিনি ভারতের কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব গভর্নর জেনারেল ও ভারত সচিবের উপর অর্পণ করেন। গভর্নর জেনারেল ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ভাইসরয় উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।

৫. ভারতীয় কাউন্সিল : ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ভারতীয় কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল। যারা ভারতীয় কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল তাদের ভারত সম্পর্কে পূর্ব থেকে ভালো ধারণা ছিল। এ কাউন্সিলের সদস্য হতে হলে কমপক্ষে ১০ বছর ভারতে চাকরি করা বাধ্যতামূলক ছিল।

৬. ভারতীয়দের অংশগ্রহণ কমানো : সিপাহি বা মহাবিদ্রোহের পর ভারতের শাসন ক্ষমতা সরাসরি ইংল্যান্ডের রানির হাতে চলে যায়। এতে করে ভারতীয়রা আগের মতো যেকোনো কাজে অংশগ্রহণ করা কমে যায়। এতে করে ভারতীয়দের গুরুত্ব আরও কমে গিয়েছিল ।

৭. ধর্ম নিরপেক্ষতা : ব্রিটিশ সরকার ভারতে প্রশাসনিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করেন। এতে বলা হয় ভারতীয় সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে না। ব্রিটিশ সরকার ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না এবং তারা খ্রিস্টান ধর্ম জোর করে চাপিয়ে দিবে না ।

৮. অন্যান্য সংস্কার : ১৮৫৭ সালের পর ভারতের সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। ভারতের সকল ক্ষেত্রেই পরিবর্তনের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৮৫৮ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসন পরিচালনা করেছিল। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের সংস্কার সাধন করেছিল । এগুলো সংস্কারে তাদের স্বার্থ নিহিত ছিল। এ কারণে ব্রিটিশরা ভারতে প্রায় দুইশত বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছিল। যার ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram