― Advertisement ―

spot_img

বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) পরীক্ষা-২০১৭

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (ইতিহাস বিভাগ) বিষয় কোড : 241503 বিষয় : বাংলার ইতিহাস (১৯০৫-১৯৪৭) ক-বিভাগ (ক) ক্ষুদিরাম কে ছিলেন? উত্তর : ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম দিকের সর্বকনিষ্ট এক বিপ্লবী ছিলেন। (খ) কখন...
Homeবাংলার ইতিহাসস্বদেশী আন্দোলনের কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

স্বদেশী আন্দোলনের কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর ।

স্বদেশী আন্দোলনের কারণগুলো সংক্ষেপে আলোচনা কর । ডি : এই বইয়ের ১১ পৃষ্ঠার ১.১৫ নং

অথবা, স্বদেশি আন্দোলনের কারণ কী ছিল?


উত্তর : ভূমিকা : উনিশ শতকের শেষের দিক ভারতে যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জন্ম হয় তার বিকাশ ঘটে স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদীরা সর্বপ্রথম স্বদেশি আন্দোলনের সূচনা করে বঙ্গভঙ্গের চরম বিরোধিতার মধ্য দিয়ে। বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য তারা ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগের অংশ হিসাবে বয়কট নীতি বিলাতি পণ্য বর্জনসহ নানা ধরনের কর্মপন্থা অবলম্বন করে যেগুলো স্বদেশি আন্দোলনকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। স্বদেশি আন্দোলনের ফলে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের জয় হলেও সর্বভারতীয়দের এ আন্দোলনে শরীক করে ব্রিটিশ সম্রাজ্যের কবজা থেকে ভারতে স্বাধীন করতে হিন্দু নেতৃবৃন্দ চরমভাবে ব্যর্থ হন। স্বদেশি আন্দোলন মূলত এতদঞ্চলের মানুষের মাঝে জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিল

→ স্বদেশি আন্দোলনের কারণ : ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন কর্তৃক প্রশাসনিক কাজের সুবিধা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ব বিশাল সম্রাজ্যের বাংলাকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়। বাংলার অখণ্ডতা বজায় রাখতে ভারতে হিন্দু নেতৃত্বের মাধ্যমে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল ইতিহাসে তা স্বদেশি আন্দোলন হিসাবে খ্যাত। নিম্নে স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হলো :

১. বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করা : স্বদেশি আন্দোলন সৃষ্টির অন্যতম প্রেক্ষাপট ছিলো বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করা। ১৯০৫ সালে তৎকালীন ভারতে নিযুক্ত গভর্নর লর্ড কার্জন প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে ও বিশাল বাংলায় সুষম উন্নয়নের জন্য বাংলাকে দুই ভাগে ভাগ করেন। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামে গঠিত নতুন প্রদেশের রাজধানী করা হয় ঢাকাকে। তখন থেকে ঢাকায় বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবন, অফিস-আদালত ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। যার ফলে রাজধানী হিসাবে কলকাতার প্রভাব কমতে থাকে। এজন্য কংগ্রেস ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতার ফলস্বরূপ স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায় ।

২. বঙ্গভঙ্গ বাতিল ঘোষণা করা : স্বদেশি আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো বঙ্গভঙ্গ রদ বা বাতিল ঘোষণা করা। বঙ্গভঙ্গ ঘোষণার পর থেকেই কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী হিন্দু সম্প্রদায় বঙ্গভঙ্গ রদের জন্য উঠে পড়ে লাগে। কলকাতার রাজনীতিবিদ, আইনজীবী থেকে শুরু করে সাংবাদিক ব্যবসায়ী, র শিক্ষিত মহল সকলে এর রদের জন্য সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এর অন্যতম কারণ ছিল নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। ঢাকা কেন্দ্রিক প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কখনো ভালো চোখে দেখেনি ৷

৩. বয়কট আন্দোলন : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হলে ভারতীয় কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কর্তৃক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বয়কট ভ আন্দোলন ঘৃণীত হয় । বয়কট প্রস্তাবে বলা হয়, যত দিন পর্যন্ত ও বঙ্গভঙ্গ রদ করা না হবে ততদিন পর্যন্ত বয়কট আন্দোলন এ চলবে। আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিলাতি পণ্য বর্জন করা হয়। বিভিন্ন অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অনেকে ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত ত্বরান্বিত করে । বিভিন্ন উপাধি বর্জন করে

৪. স্বশাসন কায়েম করা : স্বদেশি আন্দোলনের অন্যতম একটি কারণ ছিল ভারতে স্বদেশি শাসন প্রতিষ্ঠা করা। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজ শাসনের যাঁতাকলে পড়ে উপমহাদশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। এজন্য ব্রিটিশ রাজশক্তিকে হটিয়ে স্বশাসন প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। যেটি পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে

৫. দেশজ কলকারখানার নবজীবন দান : ব্রিটিশদের একচেটিয়া বাণিজ্য নীতির ফলে ভারতের দেশীয় শিল্প ব্রিটিশদের একচেটিয়াভাবে এদেশে সুঁতিবস্ত্রের ব্যবসা চালিয়ে যায়। ঢাকার বিখ্যাত মসলিন কাপড়ও ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। দেশীয় কলকারখানাকে এমন দুর্গতি থেকে বাঁচাতে স্বদেশি আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রিটিশ ভারত রাজনৈতিক  ইতিহাসে স্বদেশি আন্দোলন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ১৯০৫ .সালের বঙ্গভঙ্গবক কেন্দ্রকার ও আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সময়ের পালাবদল এটি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। প্রথমে হিন্দু-  মুসলিম বিভেদকরী করলেও পরবর্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্লাটফর্ম হিসেবে ভূমিকা রেখেছিল স্বদেশি আন্দোলন। এ আন্দোলন ভারতের পরবর্তী সব আন্দোলন প্রভাববিস্তার ও সাহস যুগিয়েছিল।