খিলাফত আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল?

Reading Time: 1 minute

ভূমিকা : ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শুরু হওয়া খিলাফত আন্দোলন ১৯২০ সালে পরিপূর্ণতা পায় এবং আরো বেগবান হয় কিন্তু এ আন্দোলন বেশি দিন স্থায়ী হতে পারেনি। কারণ, একটি আন্দোলনকে সকল করকে যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি থাকা প্রয়োজন তা খিলাফত আন্দোলনের মধ্যে ছিল না। যার ফলে এ আন্দোলন ধীরে ধীরে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ।

→ খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো :-

১. ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি : ব্রিটিশ সরকার খিলাফত আন্দোলনের ব্যাপক প্রসারে উদ্বিগ্ন হয়ে তা দমন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, এজন্য খিলাফত নেতাদের গণহারে বন্দি করা শুরু করে। যার ফলে একে একে মওলানা মুহম্মদ আলী, মওলানা শওকত আলী, জগৎ শূর শংকরাচার্য, ড. সাইফুদ্দীন কিচলু, মওলানা নিসার আলী, মৌলভি হোসাইন আহমেদ এবং পীর গুলাম মুজাদ্দিদ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গদের বন্দি করে। যার ফলশ্রুতিতে, খিলাফত আন্দোলন নেতৃত্ব ব্যর্থ হতে বাধ্য হয় ।

২. হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সংঘাত : খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন এক পর্যায়ের খিলাফত রূপ নেয়। ফলে মুসলমান ও হিন্দুদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। যেমন- ১৯২১ ও ১৯২২ সালে মহরম উপলক্ষে ১৯২২ সালে বাংলায়; ১৯২৩ সালে মুলতান ও পাঞ্জাব, সিন্ধু, অমৃতসর, আজমীর প্রভৃতি স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেখা দেয়। ফলে খিলাফত আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে অন্যদিকে মোড় নেয়, ফলে তা ব্যর্থ হয়ও বটে ।

৩. তুর্কি নেতার ঘোষণা : তুর্কি নেতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুরস্কের খিলাফত ভেঙে দিয়ে তুরস্কে একটি প্রজান্ত্রিক রাষ্ট্র ঘোষণা করে। ফলে লক্ষ করা যায় যে তুরস্কের খিলাফতের জন্য এত আন্দোলন সংগ্রাম, সেই খিলাফতই নাই। সুতরাং এ আন্দোলন এক পর্যায়ে ব্যর্থতার রূপ নেয় ।

৪. মালবারের হত্যাকাণ্ড : মালবারের হত্যাকাণ্ড খিলাফত আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। খিলাফত আন্দোলনে কয়েকজন উগ্রপন্থি মুসলমান বিদ্রোহী হয়ে কয়েকজন ইউরোপীয় ও বহু হিন্দুকে হত্যা করে, এটিকে মালবারের হত্যাকাণ্ড বলা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে পুরো ভারতে একটি উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং গান্ধীজি সামগ্রিকভাবে আন্দোলন স্থগিত করেন। ফলে এই সুবাধে ব্রিটিশ সরকার আবার তাদের দমননীতি শুরু করেন। ফলে খিলাফত আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়।

৫. সুদক্ষ সংগঠক ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাব : খিলাফত ব্রিটিশ সরকারের দমননীতিকে দুর্বল করা, কিন্তু এ আন্দোলন আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল তুরস্কের খিলাফত রক্ষা করা এবং টিকিয়ে রাখার জন্য দক্ষ সংগঠক ও যোগ্য নেতৃত্বের বড়ই অনে ছিল। এ আন্দোলন কিছুটা নাবিকহীন তরীর মত চলছিল। পরে এ আন্দোলন ব্যর্থ হবে এটাই স্বাভাবিক ।

৬. চৌরিচৌরার হত্যাকাণ্ড : ১৯২২ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের উত্তর প্রদেশের গৌরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা নামক স্থানে উম্মত্ত কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক ও বাঘিদের হাতে একুশজন পুলিশ ও চৌকিদার জীবন্ত দগ্ধ হয়। এ ঘটনায় কংগ্রেস কর্মীরা জড়িত থাকায় গান্ধীজি আন্দোলন সামগ্রিক স্থগিত করেন যা আন্দোলনের গতিকে স্থগিত করে দেয় এবং এক সময় ব্যর্থ হয় |

উপসংহার : আলোচনার শেষ প্রান্তে একথা বলা যায় যে, তুরস্কের খিলাফতকে কেন্দ্র করেই খিলাফত আন্দোলন শুরু হয় ১৯২০ সালে এ আন্দোলন বেশ বেগবান হয়েছিল কিন্তু নন কারণেই ধীরে ধীরে এ আন্দোলনের গতি কমে যায় এবং এ আন্দোলনে যোগ্য নেতৃত্বের যথেষ্ট অভাব পরিলক্ষিত হয় যার ফলে এ আন্দোলন ধীরে ধীরে ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যায়। তথাপি ব্যর্থ হলেও আন্দোলন মুসলমান তথা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও অনেক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীজ বপন করেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

The National University of Bangladesh's all-books and notice portal, nulibrary.com, offers all different sorts of news/notice updates.

You may find almost every type of National University information here, including NU news, NU admissions information, NU results, and NU exam schedules.
Our goal is to aid NU students by offering information.
© Copyright 2022 - aowlad - All Rights Reserved
magnifierchevron-down linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram